• image missing
  • image missing

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রসৈনিক তরুণ উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবকগণ: পলক, ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের ১ম পুরস্কার ১ লাখ মার্কিন ডলার’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (iDEA)” আয়োজন করছে “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ) ২০২১”।

বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২১ (বিগ) এর কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি বিশেষ সংবাদ সম্মেলন আজ বুধবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক “বিগ ২০২১” সম্পর্কে সার্বিক বিষয়সমূহ নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) পার্থপ্রতিম দেব, iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মোঃ আব্দুর রাকিব -সহ এই আয়োজনের পার্টনার ও স্পন্সর এবং আইসিটি পরিবারের আরো অনেকে।

অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকগণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রসৈনিক উল্লেখ করে বলেন তথ্যপ্রযুক্তিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, উদ্ভাবকদের সম্পৃক্ত করে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ও এন্টারপ্রেনিয়র সাপ্লাইচেইন তৈরির মাধ্যমে তরুণদের আত্মনির্ভরশীল করতে আইসিটি বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হতে অনুপ্রাণিত ও সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের জন্য একটি সম্ভাবনময়ী গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৭টি দেশ থেকে ৭ হাজারের অধিক স্টার্টআপ/ইনোভেটররা ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, দেশে সাড়ে ৬ লাখের বেশি আইটি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তারা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে। তিনি বলেন মুজিববর্ষে স্টার্টআপ বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৫০টি স্টার্টআপের মাঝে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের ১ম পুরস্কার ১ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুদান দেয়া হবে। তারা যেন উদ্ভাবনী কাজে বিনিয়োগ ও অর্থায়ন নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০টি স্টার্টআপ নির্বাচিত হয়েছে।  তাদের ১০ লক্ষ করে টাকা দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বিষয়ে বেসিক নলেজ বা মৌলিক ধারনা প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর সোনার মানুষে পরিণত করতে দেশে ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। তরুণরা যেন এলাকাই বসেই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে সে লক্ষে দেশে ৬৪টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রযুক্তিখাতে নেতৃত্ব দিতে পারে সে লক্ষে প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক তৈরি করতে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করা হবে। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনায় মানুষের ঘরে ঘরে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে উদ্যোক্তারা। সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে ই-ভ্যালির মতো স্টার্টআপগুলো।

বড় বড় গ্রুপগুলো এখন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে পলক বলেন উদ্যোক্তাদের বড় করে তুলতে দেশের প্রত্যেকটি হাইটেক পার্কে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ছয় মাসের ফ্রি কো-ওয়ার্কিং স্পেস দেয়া হচ্ছে। দেশজুড়ে তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোক্তা ক্যাম্পাস গড়ে তুলছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে এর বদলে এখন বলতে হয় উদ্যোক্তা হয় যে, গাড়ি-ঘোড়া বানায় সে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং ইতোমধ্যে বাছাইকৃত স্টার্টআপদের শুভকামনা জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব পার্থপ্রতিম দেব বলেন “বঙ্গবন্ধু হলেন সারা বিশ্বের নেতা। তাঁর এই কর্মকান্ডকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের একটি বিনম্র প্রয়াস হল “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ) ২০২১”।

অনুষ্ঠানটিতে iDEA প্রকল্পের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মোঃ আব্দুর রাকিব স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে “বিগ-২০২১” প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ ১৪২টি দেশে ক্যাম্পেইন শেষে প্রাথমিক পর্যায়ে দেশ-বিদেশ থেকে ৭,০০০- এরও বেশি স্টার্টআপ আবেদন করে যেখান থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৫৬টি দেশ থেকে মোট ২৫৫টি প্রকল্প গৃহিত হয়। সেখান থেকে দুই দফায় বাছাই শেষে ইতোমধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে সেরা ১০টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্টার্টআপ, যারা সরাসরি যাবে গ্র্যান্ড ফিনালেতে। অপরদিকে, দেশিয় পর্যায়ে স্টার্টআপ বাছাই হয় প্রাথমিকভাবে দুই দফায়। প্রথম পর্যায়ে ২৮ জন বিচারক ৫টি স্ক্রিনিং বোর্ডের মাধ্যমে বাছাই করেন ২৮৬টি দেশীয় স্টার্ট-আপ। সরকারি-বেসরকারি ৩৫ জন অভিজ্ঞ বিচারক ৬টি প্যানেলে বিভক্ত হয়ে এই স্টার্টআপগুলো থেকে বেছে নেন সেরা ৬৫টি স্টার্টআপ, যারা ৬ দিনব্যাপী অনলাইন বুট ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। iDEA প্রকল্পের পরিচালক আরো বলেন যে “ইতোমধ্যে অনলাইন বুটক্যাম্পটি আগামী ১২ জুন ২০২১ তারিখ থেকে শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। বুট ক্যাম্পে গ্রুমিং শেষে এই ৬৫টি স্টার্ট-আপ নিয়েই শুরু হবে ১৩ পর্বের টিভি রিয়েলিটি শো যা জুলাই ২০২১ এর প্রথম সপ্তাহ থেকে একাত্তর টিভিতে প্রচার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এপর্বে প্রতিযোগীরা মুখোমুখি হবেন দেশের প্রতিষ্ঠিত বিজনেস আইকনদের যারা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থেকে বাছাইকৃত ৬৫ স্টার্টআপ থেকে ২৬টি স্টার্টআপ নির্বাচন করবেন। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নির্বাচিত ১০টি এবং আইডিয়া প্রকল্পের আওতাভুক্ত পোর্টফলিও স্টার্ট-আপের সেরা আরও ১০টি স্টার্টআপ অর্থাৎ মোট ৪৬টি স্টার্ট-আপকে নিয়ে হবে “বিগ ২০২১ গ্র্যান্ড ফিনালে”।” তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, সবশেষে সেরা একটি স্টার্টআপ পাবে বিশেষ সম্মাননা এবং এক লাখ ইউএস ডলার সমমূল্যের অর্থ পুরস্কার। একই সাথে এই রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়া ২৬টি র্স্টাট-আপ ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নির্বাচিত ১০টি বিজয়ী র্স্টাটআপ প্রত্যেকে পাবে আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ টাকা করে অনুদান। এছাড়াও, “বিগ-২০২১’র টিভি রিয়েলিটি শো এবং গ্র্যান্ড ফিনালে রাউন্ডে উপস্থিত থাকবেন দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা। কোনও স্টার্টআপ তাদের পছন্দ হলে সেটি পাবে নিশ্চিত বিনিয়োগ।”

এছাড়া, এই আয়োজনে স্পন্সর হিসেবে “ইভ্যালি” এর সিইও মোহাম্মদ রাসেল, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবীন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে “ইভ্যালি” এর সিইও মোহাম্মদ রাসেল বলেন যে “বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরনায় আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি এবং আমরা এমন একটি আয়োজনে পাশে থেকে গর্ববোধ করছি। আমরা অন্যান্য স্টার্টআপদের সহযোগিতা করতে চাই। স্টার্টআপদের জন্য ২ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা ইভ্যালির রয়েছে।”

ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী বলেন, “মুজিববর্ষে বিগ ২০২১ একটি অন্যতম আয়োজন যা তরুণদের এবং উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করবে। তরুণ উদ্যোক্তা ও নতুন নতুন উদ্ভাবকদের নিয়ে বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই বিশ্বের অন্যতম একটি তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর দেশে পরিণত হতে পারবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ওয়ালটন পরিবার বিগ আয়োজনের সাথে সংযুক্ত হতে পেরে গর্বিত।”

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবীন বলেন যে ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড হিসাবে “স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড”  বিগ ২০২১ এ স্পন্সর হিসেবে থাকতে পেরে অত্যন্ত সম্মানিত এবং গর্বিত। যথাযথ ডিউডিলিজেন্স এর মাধ্যমে অনুমোদন প্রাপ্ত একাধিক স্টার্টআপকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত পটেনসিয়াল ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট করার প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে এবং এই স্টার্টআপগুলি “শতবর্ষে শত আশা’ ” ভিনটেজে যোগ দেবে।

করোনা পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বর ২০২১-এ যথাযথ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২১” এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর সদয় উপস্থিতিও এই অনুষ্ঠানে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিগ ২০২১ এর সঙ্গে পার্টনার হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিজ (সিসিএ) ও এটুআই এবং একইসাথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেসিস, বাক্কো, বিসিএস, ই-ক্যাব, আইএসপিএবি এবং বিআইজেএফ। এছাড়া, এই আয়োজনে স্পন্সর হিসেবে সহযোগিতায় রয়েছে ইভ্যালি, ওয়ালটন এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড।

Source: https://www.kalerkantho.com/online/national/2021/06/09/1041470?fbclid=IwAR07Be55Q8KxajtLyj4siJu_PiBI7YoHSiJtTkbzcLCohA6q96O4FtHYRP4